মৃত্যুর আগে মা ও ভাইকে হোয়াটসঅ্যাপ করেছিলেন অনভিতা। তাতে লিখেছিলেন, ‘‘আর সহ্য হচ্ছে না। স্বামী প্রতিটা কাজে খুঁত ধরে। আমার শ্বশুরবাড়ি এমন একটা পরিবার, যারা শুধু নিতেই জানে।’’
২৯ বছর বয়সী অনভিতা শর্মা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। ২০১৯ সালে বিয়ে করেন অনভিতা। তিনি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের পিজিটি ফাইন আর্টসের শিক্ষিকা। অনভিতার স্বামী গৌরব কৌশিক পেশায় চিকিৎসক। দিল্লিতে প্র্যাকটিস করেন। তাদের একজন ৪বছরের সন্তান ও আছে। স্বামীর অত্যাচারে আত্মঘাতী শিক্ষিকা। রবিবার বসুন্ধরার বাড়ি থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছে। রবিবার দুপুরে গৌরব এবং তাঁদের চার বছরের সন্তান বাইরে ছিলেন, সেই সময়ই এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর মৃতের স্বামী গৌরব কৌশিক এবং শ্বশুর সুরেন্দ্র শর্মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শাশুড়ি মঞ্জু পলাতক। মৃত্যুর আগে মা ও ভাইকে হোয়াটসঅ্যাপ করেছিলেন অনভিতা। তাতে লিখেছিলেন, ‘‘আর সহ্য হচ্ছে না। স্বামী প্রতিটা কাজে খুঁত ধরে। আমার শ্বশুরবাড়ি এমন একটা পরিবার, যারা শুধু নিতেই জানে।“ এসিপি অভিষেক শ্রীবাস্তব বলেন, “মেসেজ পাওয়ার পরই পরিবারের তরফে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি। এরপর তাঁরা গৌরবকে বিষয়টা জানান। গৌরব এসে দেখেন, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। তাঁরা জানলার গ্রিল কেটে ঘরে ঢোকেন।“ মৃত্যুর আগে স্বামী গৌরব কৌশিকের উদ্দেশ্যেও এক লাইন লিখে যান তিনি, “রান্না করে রেখেছি, গৌরব কৌশিক, দয়া করে খেয়ে নিও।“
অনভিতার স্বামী গৌরব কৌশিক তাঁর বিরুদ্ধে পণের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। গৌরব, সুরেন্দ্র এবং মঞ্জুর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা ৮৫ (স্বামী বা স্বামীর পরিবারের দ্বারা মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন), ধারা ৮০ (২) (যৌতুকের কারণে মৃত্যুর শাস্তি), ধারা ১১৫ (২) (ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করা), ধারা ৩৫২ (অপমানজনক আচরণ, যা সংঘর্ষ উসকে দিতে পারে) এবং যৌতুক বিরোধী আইন, ১৯৬১-এর বিভিন্ন ধারায় মামলা করেছে পুলিশ। বার্তায় অনভিতা লিখেছেন, “স্বামী আমার চাকরিকে বিয়ে করেছে, আমাকে নয়। এমন স্ত্রী চেয়েছিল, যে সুন্দরী হবে, পরিশ্রম করবে এবং যার একটা চাকরি থাকবে। আমি সাধ্য অনুযায়ী সব করেছি, কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়। ওরা এমন একজনকে চেয়েছিল, যে শুধুই শ্বশুরবাড়ির কথাই ভাববে। কিন্তু আমার বাবা-মাও আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ।
ছেলে যেন তার বাবার মতো না হয়, শেষ বার্তায় মায়ের কাছে এই আর্জিই জানিয়েছেন অনভিতা। তিনি লিখেছেন, “আমার পাসবই, চেক সব গৌরব নিজের কাছে রাখত। তোমরা শুধু আমার সন্তানকে দেখো। এই পৃথিবীতে ওকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসি। আমি চাই না, ও ওর বাবার মতো হয়ে যাক।